ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে দূর্নীতির অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব নতুন ঘর দিতে তালিকা তৈরীর সময় খরচের অজুহাতে ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর নিজের অনুগত লোকজনের মাধ্যমে উপকারভোগী পরিবার থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকায় জোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের সুফল ও অগ্রগতি নিয়ে জনমনে নানা ধরণের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত আশ্রয়ন ২ প্রকল্পের অধীন জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দে ২০০টি গরীব পরিবারকে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ও পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নে। সরকারি হিসেবে প্রতিটি নতুন ঘর তৈরীতে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রকল্পের অধীনে ঘর তৈরীর দায়িত্ব পেয়েছেন বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর। অভিযোগ উঠেছে, তৈরীকৃত এসব নতুন ঘর নির্মাণে প্ল্যান, ডিজাইন প্রাক্কলন মোতাবেক গুণগতমান ঠিক রেখে কাজ করা হয়নি। নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে এসব নতুন ঘর।
স্থানীয় সুত্রে অভিযোগ উঠেছে, নতুন ঘরের তালিকা করার সময় উপকারভোগী পরিবার গুলো থেকে খরচের নানা অজুহাতে অতি গোপনে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে নেয়া হয়েছে প্রকারভেদে ১০-১৫ হাজার টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান অনুগত লোকজনের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন।
জানা গেছে, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ‘পিআইসি’ দ্বারা সরাসরি ক্রয় পদ্বতিতে (ডিপিএম) নতুন ঘরগুলো নির্মাণের কথা থাকলেও কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর প্রকল্পের নকশা ডিজাইন ও প্রাক্কলনের তোয়াক্কা না করে গৃহহীন মানুষের অর্থ আত্মসাৎ করার লক্ষে নিজেদের ইচ্ছামতো নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করেছে নতুন ঘর।
নির্মাণ কাজের সাথে শ্রমিক হিসাবে উপকারভোগী পরিবারকে রাখার নির্দেশ থাকলেও তা মানা হয়নি। বর্তমানে নতুন ঘর গুলো বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ মাঠ থেকে উপকারভোগী পরিবার গুলো নিজেদের খরচে পরিবহন করতে বাধ্য হচ্ছে।
উপভোরভোগীদের অভিযোগ, তৈরীকৃত নতুন ঘরের জন্য তারকাটা, পেরেক, তার, কব্জা, ছিটকানি, স্ক্রুর ওয়াশার, মেঝের রং সহসব কিছুই তাদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। নীতিমালা মতে, প্রতিটি ঘরের আয়তন ২৭৫ বর্গফুটের স্থলে করা হয়েছে ২৪০ বর্গফুট আয়তনের। ঘরের চালায় ব্যবহৃত টিনের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উপকারভোগী পরিবার গুলো। তাদের মতে, সরকারিভাবে যে ধরণের উন্নতমানের টিন দেয়ার কথা ছিল তা তাদেরকে দেয়া হয়নি। প্রতিটি ঘরে ১২শ’ করে ইট দেওয়া হচ্ছে। এসব ইটের মান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী অনেক উপকারভোগী।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, নতুন এসব ঘরের নকশায় ফাউন্ডেশনে ঢালাই দেয়ার কথা থাকলেও কোন ঘরেই তা দেয়া হয়নি। মেঝে ব্যবহার হচ্ছে ইট। পিলারে ব্যবহার হয়েছে একেবারেই নিম্নমানের খোয়া। পিলারের অগ্রভাগে সিআইজি শিটের প্লেট, নাট-বল্টুর কথা থাকলেও তা ব্যবহার করা হয়নি। এ কাজেও রয়েছে ফাঁকি। ঘরের বেড়া ও চালায় কাঠ ব্যবহারের তালিকায় রয়েছে শাল, গর্জন, জারুল, কড়াই, শিশু, তাল, পিতরাজ, দেবদারু, আকাশমনি। কিন্তু ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের কাট।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ঘর নির্মাণে ইউপি চেয়ারম্যান খরচের তালিকায় উচ্চ হারে হিসাব তৈরী করলেও প্রতিটি ঘরের নির্মাণ খরচ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি হবে না। তদন্ত করলে সত্যতা প্রকাশ হবে বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত আশ্রয়ন প্রকল্পের অধীনে চকরিয়া উপজেলার দুই ইউনিয়নে দুইশত নতুন ঘর নির্মাণে তদারক করছেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর।
এব্যাপারে বদরখালী ইউপি চেয়ারম্যান খাইরুল বশর বলেন, কাজে কোন ধরনের অনিয়ম হয়নি। সরকারি নীতিমালার আলোকে প্রতিটি নতুন ঘর ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার করে তৈরী করা হয়েছে। খরচের নামে কোন পরিবার থেকে একটি টাকাও নেয়া হয়নি। এধরণের অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন।

পাঠকের মতামত: